হিজাব বা পর্দা কেন করতে হবে?
পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পোশাককে বলা হয় হিজাব। ইসলামে পর্দার মূল উদ্দেশ্য সৌন্দর্য প্রকাশ করা নয়, বরং সৌন্দর্য গোপন করা। হিজাব একটি ফরজ বিধান। হিজাব নারীদের জন্য একটি মহান অনুষঙ্গ। হিজাব নারীকে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল করেছে। পর্দার মাধ্যমে ইসলাম নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করে সমাজের স্বাভাবিক কর্মপ্রবাহকে করেছে মার্জিত ও গতিশীল। তবে পোশাকের এই শর্ত নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
রাসূল (সা) বলেন,
নারী পর্দাবৃত থাকার বস্তু। যখন সে পর্দাহীন হয়ে বের হয় তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়
শরীয়ত মোতাবেক হিজাব বা পর্দা কোনোভাবেই সৌন্দর্যবর্ধক হওয়া যাবে না। এমনকি হিজাব হতে হবে এমন, যেন তা কোন ভিন্নধর্মাবলম্বীর পোশাক বা পুরুষের পোশাকের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন,
রাসূল (সা.) সেসব পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন, যারা নারীদের পোশাক পরিধান করে আর সেই নারীদের অভিসম্পাত করেছেন, যারা পুরুষদের পোশাক পরিধান করে
হিজাব বা পর্দা করার গুরুত্ব
সতীত্ব ও ভদ্রতা বজায় রেখে চলার জন্যে মহান রাব্বুল আলামিন হিজাব বা পর্দার বিধান নাযিল করেছেন। হিজাব হলো ঈমানের পরিচায়ক। ঈমানদারদের অন্যতম গুণ হলো তারা পর্দা রক্ষা করে চলে। তাছাড়া পর্দা করা এক ধরনের ভদ্রতা। হিজাব করার মাধ্যমে মানবজীবনে শালীন চাল-চলন ও আচার-আচরণ বজায় থাকে। পর্দা মহান আল্লাহ্র নিকট থেকে একটা বিরাট নিয়ামত। হিজাব নারী ও পুরুষ উভয়কে বড় ধরনের পাপ ও ফিতনা থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও পর্দা পালনের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকট অধিক প্রিয় ও সম্মানিত হতে পারে।
আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে
পর্দার মাধ্যমে তে নারী ও পুরুষের নৈতিক চরিত্রের হিফাজত হয় এবং নর-নারীর অবাধ ও প্রতিবন্ধকহীন মেলামেশা পথ রুদ্ধ হয়। পর্দার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরকীয়া বিহীন একটি পবিত্র সম্পর্ক তৈরী হয়। হিজাব বা পর্দা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি পর্দা তাকওয়া অর্জনের একটি সর্বোত্তম মাধ্যম। বিশ্বাসী মুমিনগণ আল্লাহ্র আদেশ পালন ও তাঁর সন্তুষ্টির জন্য পর্দা রক্ষা করে চলেন যা তাকওয়ার অন্তর্ভূক্ত।
হিজাব বা পর্দা করার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
হিজাব বা পর্দা নারীদের লাজুকতা ও শালীনতা রক্ষার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ ও বিপদের ঝুঁকি কমায়। গবেষকদের মতে, হিজাব শ্বাস-প্রশ্বাসের নালীকে ক্ষত সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া নারীরা যদি পর্দা না করে তাদের পোশাক পায়ের গোড়ালির উপরে তোলে তাহলে তাদের ভেতর মহিলাসুলভ হরমোন কমে যাবে। এর ফলে তাদের ভ্যাজাইনাল ইনফ্লামেশন, কোমর ব্যথা, আঙ্গিক দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে।
সূর্যের আলোতে বিদ্যমান অতি বেগুনী রশ্মী মেয়েদের নরম ত্বক ও দেহের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগলেই চর্ম ক্যন্সার হতে পারে। নারীরা ভালোভাবে হিজাব বা পর্দা করলে স্বাভাবিকভাবে তাদের নাক ও গলা ঢাকা থাকে। ফলে অতি বেগুনী রশ্মী ত্বক ও দেহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে এ দু’টি স্পর্শকাতর স্থানে ভাইরাস আক্রমণে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এসব স্থানে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। অতিরিক্ত মেকআপ মানব কোষের ত্বকে ক্যন্সারের সৃষ্টি করে। ব্যবহারে যেসব নারীরা হিজাব না করে অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহার করে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য, তাদের অবশ্যই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।
স্বাস্থ্যকে সুন্দরভাবে রক্ষার জন্য মাথা ঢেকে রাখা একান্ত জরুরি। ডাক্তাররা বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মস্তিষ্কেরর ফসফরাস গলতে শুরু করে। মাথা খোলা থাকা অবস্থায় প্রচণ্ড সূর্যতাপের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকলে যেকোনো সময় উচ্চ তাপমাত্রায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এর ফলে স্বরণশক্তি লোপ পেয়ে যাওয়া ও ব্রেইনের কোনো কোনো অংশের কর্মপ্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। মেয়েদের জন্য হিজাব ও ছেলেদের জন্য টুপি এর উত্তম সমাধান।
চুলকে উজ্জ্বল ও দূষন মুক্ত রাখতে হিজাব এর বিকল্প নেই। একটি রিপোর্টে দেখা গেছে মাথা থেকে চুল উঠে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো মাথায় ধুলোবালি জমা হওয়া। সুতরাং হিজাব বা পর্দা করার উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।
পর্দা না করলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
বেপর্দা থেকে জন্ম নেয় পরকীয়া ও চরিত্রহীনতার জন্ম জঘন্য সব পাপ। পর্দাহীনতার কারণে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, অপকর্ম ও ব্যভিচারের মতো নিকৃষ্ট পাপের সূচনা হয়। আধুনিক সমাজে আজ পর্দার যথাযথ পালন নেই বিধায় ইভটিজিং, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন প্রকট আকার ধারণ করেছে। হিজাব না করার ফলে নানা অঘটনসহ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত হয়। এছাড়াও পর্দাহীনতার কারণে পরকিয়া ও চরিত্রহীনতার মতো ঘৃণিত কর্মের সূত্রপাত হয়। যার ফলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস উঠে যায়। এ কারণেই পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় মহান রাব্বুল আলামিন পর্দার বিধান করে দিয়েছেন।
যথাযথভাবে হিজাব বা পর্দা করে চললে একজন পর্দানশীল নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস পায় না। মূলত যারা পর্দাহীনভাবে চলাফেরা করে অধিকাংশ সময় তারাই ইভটিজিং ও ধর্ষণসহ নানা রকমের নির্যাতনের সম্মুখীন হয় এবং রাস্তাঘাটে তারাই বেশি ঝামেলার শিকার হয়। তাই নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত রক্ষার্থে পর্দার গুরুত্ব অপরিসীম। এখনকার সমাজে নারীরা পর্দার বিধান ভুলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করে বল্গাহীন জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। পর্দহীনতা দ্বীন ও ঈমানকে বরবাদ করে দেয়। এ কারণেই পাশ্চাত্যবাসীদের নৈতিক ও চারিত্রিক কাঠামো আজ চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন।
আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে পর্দার যে জ্ঞান লাভ করেছিলেন, তা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই কুরআন ও হাদিসের আলোকে যাদের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ, তাদের সামনে বেপর্দা হয়ে খোলামেলা পোশাকে যাতায়াত করা বা অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করা হারাম এবং কবিরা গোনাহ। বেপর্দার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল– এর কারণে দুনিয়াতে অশান্তি ও দুর্ভোগের শাস্তিসহ পরকালে কঠিন আজাবের সম্মুখীন হতে হবে।
পর্দার বিধান এবং আমাদের চিন্তাধারা
হিজাব বা পর্দা শব্দের অর্থ হলো ‘নিজেকে আবৃত করা।’ হিজাব বা পর্দার জন্য যে বোরকা বা কাপড় পরা হবে, তা হতে হবে ঢিলেঢালা এবং পুরো শরীর আবৃতকারী। কিন্তু বর্তমান সময়ে হিজাব বা পর্দার নামে যে সব টাইটফিট বোরকা বা কাপড় পরা হয় তা আদৌ হিজাবের সংজ্ঞায় পড়ে না। পর্দা মানে শুধু দায়সারা গোছের রঙিন আকর্ষণীয় সব কাপড়ের সমাহার নয়। বর্তমান নারীরা এমন সংকুচিত ও টাইটফিট বোরকা পরছে, যা দিয়ে তার শরীর প্রদর্শিত হচ্ছে, সৌন্দর্য আড়ালের পরিবর্তে প্রকাশ পাচ্ছে নগ্নতা। হিজাব বা পর্দা তখনই পূর্ণতা পায় যখন পুরো শরীর, পরিধেয় বস্ত্র দিয়ে ঢেকে সৌন্দর্যকে আড়াল করা হয়। কিন্তু তথাকথিত একশ্রেণীর আল্ট্রামডার্ন মুসলিম নারীরা হিজাব এর নামে প্রকৃত মূল্যবোধকে বিকৃত করছে, সৌন্দর্য গোপনের পরিবর্তে তা নিজেদের ইচ্ছামত প্রদর্শন করছে।
হিজাব বা পর্দা করা ফরজ। কিন্তু বর্তমানে আমরা পর্দা করার মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টির সাথে সাথে তাকওয়া ও আল্লাহভীতির নিবিড় সম্পর্ককে ভুলতে বসেছি। আমরা নিজেদের আবৃত করছি ঠিকই কিন্তু সেটা হিজাব বা পর্দার উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণ করছে কিনা সে ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উৎকর্ষের সাথে সাথে আমাদের গোপনে অন্যায় করার প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। পর্দা করার সঠিক বিধান ভুলে আমরা গায়রে মাহরামদের (যাদের সামনে পর্দা করা ফরজ) সাথে অবাধে মেলমেশা করছি। মডার্ন যুগে নারী ও পুরুষদের মাঝে দ্বীন সুরক্ষার প্রেরণা কমে গেছে, বেড়ে গেছে ফিতনা।
নারীকে চার দেয়ালের ভিতরে গৃহবন্দি করে রাখাকে আমরা অনেকেই পর্দা বা হিজাব মনে করি। কিন্তু ইসলাম নারীকে অশিক্ষিত বা গৃহবন্দী হয়ে থাকতে বলে নি। শরীয়তসম্মতভাবে হিজাব বা পর্দার বিধান পালন করে নারীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিক্ষাঙ্গনে, শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে এগিয়ে যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পর্দা প্রথা নারীকে শৃঙ্খলিত করার পরিবর্তে তাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে, সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।
হিজাব এবং আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা
বর্তমান সময়ে হিজাবের নামে চলছে এক ধরনের প্রহসন। বাজারে চলে এসেছে হরেক রকম বুটিকের আকর্ষণীয় স্কার্ফ। মেয়েরা বাহারি ডিজাইন করা বোরকার সঙ্গে ফিনফিনে স্কার্ফ বাঁধছে, বাহারি অলংকার আর গয়না পরে নিজের চেহারার সৌন্দর্য আর নিজেদের অঙ্গের সুদীপ্ত আভা প্রদর্শন করছে। এসবের দ্বারা ইসলাম ঘোষিত হিজাব এর শরয়ি চাহিদা মোটেও পূরণ হচ্ছে না। কারণ হিজাব কোনো ফ্যাশনের উপকরণ কিংবা সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম নয়। সমাজের সচেতন মুসলমানরা যদি এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে হয়তো অচিরেই আল্লাহর গজব আমাদের ধবংস করতে পারে।
বতর্মানে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনে নারীদেরকেই পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্যাশনের নামে নারী ও পুরুষকে বেপর্দা করার যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছে তা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও পুরো রাষ্ট্রের জন্য এক মরণ ব্যধি। সম্প্রতি নারীনির্যাতন খুব বেড়ে গেছে, বিশেষত উঠতি বয়েসী মেয়েরা চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার। এ সমাজের চরম ব্যর্থতা যে, নিজেদের মা-বোনকেও নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
পর্দার বিধান রক্ষায় আমাদের কর্তব্য
পর্দাহীনতার কারণে আমাদের মা-বোনেরা যে নিরাপত্তাহীনতায় আছে তা নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। এখন প্রয়োজন আল্লাহ্ ও তার রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক জীবন-যাপন করা। বর্তমান নষ্ট সমাজে নিজেকে সবকিছু থেকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন, কিন্তু তার মধ্যেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। নিজের বিবেক বুদ্ধিকে একটু সচেতনভাবে কাজে লাগাতে হবে, এবং অবশ্যই নিজেকে যত্রতত্র মোহনীয়ভাবে প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নারীদের যেমন পর্দা করা ফরজ, তেমনি তাদেরকে পর্দার বিধান মোতাবেক চলতে দেয়া পুরুষের উপর ফরজ। যেসব পুরুষরা নারীদের অভিভাবক, তাদের জন্য ফরজ হল– নারীদেরকে পর্দায় রাখা। যেসব পুরুষ তাদের অধীনস্ত নারীদের পর্দায় রাখার চেষ্টা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি। তাই মুসলিম উম্মাহর উচিত অশালীন পোশাক পরিহার করে, শালিন পোশাক পরিধান করা। সমাজের প্রত্যেক নারী ও পুরুষের উচিত তাদের নিজ নিজ আত্ম-সম্মানবোধ এবং সৌন্দর্যের হিফাজত করা।
হিজাব বা পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে শেষ কথা
যে সমাজ থেকে পর্দা উঠে যায় সে সমাজে নির্লজ্জতা, বেহায়াপনা এবং অশান্তি আঁকড়ে ধরে। পর্দার লংঘন করে চলাফেরা করা, দুনিয়ার কর্ম সম্পাদন করা নারী-পুরুষ কারো জন্যই শোভনীয় নয়। আল্লাহ্ ও রাসূলের নির্দেশমত পর্দার বিধান পালনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের সংযত জীবন-যাপন ব্যক্তি-পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com
Your article helped me a lot, is there any more related content? Thanks!
online pharmacy india https://indiaph24.store/# п»їlegitimate online pharmacies india
reputable indian online pharmacy
pharmacies in mexico that ship to usa: buying prescription drugs in mexico online – mexican pharmaceuticals online
best online pharmacies in mexico: Mexican Pharmacy Online – mexican drugstore online
world pharmacy india https://indiaph24.store/# indianpharmacy com
indian pharmacy
I don’t think the title of your article matches the content lol. Just kidding, mainly because I had some doubts after reading the article.
How do I start a blog under a pen-name and maintain my anonymity. How do you then get regular readers?
priligy amazon uk What about my cancer or my treatment requires me to be on medicine when I don t have a clot now
I wish to copyright the content on my blog (content and images)?? can anyone please guide as to how can i go abt it?.
안전한 온라인 환경을 위해 필수적인 곳이에요!! 방문하다 먹튀레이더
Your way of describing the whole tying in this article iis in fact nice,
every one be capable of without difficulty understand
it, Thanks a lot. http://boyarka-inform.com/
Im thankful for the blog post.Really looking forward to read more. Awesome.
What a data of un-ambiguity and preserveness of precious experience concerning unpredicted feelings.
Great, thanks for sharing this blog post.Thanks Again. Really Cool.
Thanks for sharing your wisdom. cg news
bestsellers best 10 online canadian pharmacies pain relief
Hi! This is my first visit to your blog! We are a group of volunteers and starting a new initiative in a community in the same niche. Your blog provided us beneficial information to work on. You have done a wonderful job!
I quite like looking through a post that can make people think. Also, thanks for allowing for me to comment!
Major thankies for the blog article.Really thank you! Will read on…
Hey, thanks for the post.Much thanks again. Will read on…
A big thank you for your blog.Much thanks again. Great.
Thanks a lot for the blog. Great.
I really liked your blog.
Great blog article.Much thanks again. Awesome.
I value the post.Thanks Again. Great.
Wow, great article.Really thank you! Really Cool.
Right now it seems like Movable Type is the top blogging platform out there right now.(from what I’ve read) Is that what you’re using on your blog?