4.2/5 - (5 votes)

সংসারে স্বামী স্ত্রীর চেয়ে বয়সে বড় হবে- সারা পৃথিবীতেই স্বামী-স্ত্রীর বয়স নিয়ে এরকম একটা অলিখিত নিয়ম চালু আছে। ’ভালোবাসা’ বয়স মানে না! কাউকে যখন ভালো লেগে যায়, তখন তার সাথে বয়সের পার্থক্যটা হিসেব করার অবকাশ থাকে না। প্রেম, ভালোবাসা বা বিয়ে যে কোনো বয়সেই হতে পারে। তবে এসব সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বয়সে ছোট হবে সবাই এমনটাই ভাবে। নিজের থেকে বয়সে বড় এমন একজন নারীকে যে কেউই বিয়ে করতে পারেন। কিন্তু আমাদের সমাজ এরকম ‘অসম’ বয়সের বিয়ের সম্পর্ক সহজে মেনে নিতে চায় না। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর পার্থক্যের কারণে ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও সমস্যা দেখা দেয়।

স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হয় তখন নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। সেটা হতে পারে শারীরিক ও মানসিক দুটোই। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হয় তাহলে কি রকম সমস্যা হতে পারে এবং স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর কতো হওয়া উচিত তা নিয়ে।

স্ত্রী বয়সে বড় হলে কি সমস্যা হয়?

সমাজের নিন্দা

স্ত্রী যদি স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হন তাহলে আমাদের সমাজের লোকজনের নিন্দার মুখোমুখি হতে হয়। স্বামী-স্ত্রীর দিকে বাঁকা চোখে তাকান অনেকেই। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কটুক্তি শুনতে হয় স্বামীকেই। বলা হয়, বয়সে বড় নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে বা বিয়ে করে ছেলেটি জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি করেছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, বিয়ের পর মনে রাখবেন যে আপনাদের দুজনের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় শক্তি যার সামনে লোকনিন্দা কিছুই নয়। তাই লোকের কথায় কান না দিয়ে একে অপরের প্রতি আস্থা রাখুন।

বন্ধুবান্ধবরাও পাশে থাকে না

স্ত্রী বয়সে বড় হলে কথা শুনতে হয় বন্ধুদের থেকেও। জামাই-বউয়ের বয়সের পার্থক্য নিয়ে অনেকে আড়ালে, এমনকি সামনাসামনিও হাসি-ঠাট্টা করে। বন্ধুদের এমন আচরণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে মেয়েদের মনে এটা গভীর প্রভাব ফেলে। একটা সময়ে সে নিজেকে দোষী মনে করে। এই মানসিক চাপ যেমন দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে, তেমনি এর কারণে সম্পর্ক ভেঙেও যেতে পারে। তাই এমন বন্ধুদের পাত্তা না দিয়ে বরং যারা আপনাদের সমস্যাগুলো বুঝবে তাদের সাথেই যোগাযোগ রাখুন। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের সাথে সময় কাটান। প্রয়োজনে ম্যারেজ কাউন্সিলারের সহায়তা নিন।

ফ্যামিলির সাপোর্ট পাওয়া যায় না

স্ত্রীর বয়স বেশি হলে প্রধান সমস্যা শুরু হয় নিজের পরিবার থেকেই। খুব কম পরিবারই আছে যারা এমন বিয়ে সহজেই মেনে নেয়। এরকম সমস্যায় পড়লে আস্তে আস্তে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনাদের দুজনের মধ্যে কতটা বোঝাপড়া আর আন্তরিকতা আছে। দেখবেন এক সময় পরিবার মেনে নেবেই।

আদর্শ জীবনসঙ্গী খুঁজতে

চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে যায়

স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বয়সে বড় হলে স্বাভাবিক ভাবেই স্ত্রীর চেহারায় আগে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে। অনেক স্বামীই এটা নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। অনেক পুরুষই তখন স্ত্রীকে লোকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে সংকোচবোধ করেন। আবার স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর পার্থক্য বেশি হলে মানসিক বয়সের পার্থক্য বেশি হয়। এ কারণে মাঝে মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। অনেক সময় স্ত্রীকে মনে হতে পারে অনেক বেশি পরিপক্ব আর স্বামীকে মনে হতে পারে ছেলেমানুষ। আবার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও নিজের মতামত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা থাকে মেয়েদের মধ্যে। বিয়ের প্রথম দিকে তেমন কোনো সমস্যা না থাকলেও পরবর্তীতে এসব সমস্যা বাড়তে থাকে।

এই সমস্যা থেকে বের হতে চাইলে একে অপরের চিন্তাভাবনা, মতামত, সিদ্ধান্ত ইত্যাদিকে গুরুত্ব দিন। সমস্যা হলে খোলাখুলি আলোচনা করুন। আস্থা রাখলে আশা করা যায় সকল সমস্যা দূর হবে। মনে রাখবেন, স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে ভালোবাসাটাই মুখ্য ব্যাপার, এখানে বয়স বা চেহারা কোনো বিষয়ই নয়।

যৌন মিলন এবং গর্ভধারণে সমস্যা

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য খুব বেশি হলে জীবনের একটা সময়ে গিয়ে যৌনমিলনে সমস্যার সৃষ্টি হয়। কারণ নারী এবং পুরুষের শারীরিক চাহিদা সব সময় এক রকম থাকে না। বিশেষ করে নারীদের বয়স বেড়ে গেলে তাদের শারীরিক চাহিদা দিন দিন কমে যায়। অপরদিকে পুরুষদের শারীরিক চাহিদা অনেক দিন পর্যন্ত একই রকম থাকে। তাছাড়া স্ত্রীর বয়স বেশি হলে গর্ভধারণে সমস্যা হয়। ৩৫ বছরের পরেই গর্ভধারণের ব্যাপারটি মেয়েদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বিয়ের পরপরই এই বিষগুলো নিয়ে দুজনেই আলোচনা করে নিন। এসব ব্যাপারে ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন।

স্বামী-স্ত্রীর বয়স সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

আধুনিক যুগে এসেও দেখা যায়, বিয়ের ক্ষেত্রে মানুষ মেয়েদের অধিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত অবহেলা করে। যেমন, এখনও অনেক জায়গায় কম বয়সী মেয়ের সাথে বেশী বয়স্ক পুরুষের বিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের সমতা হলে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর সমতা রক্ষা করা আবশ্যক। বিয়ের সময় ছেলে-মেয়ে উভয়ের বয়স বিবেচনার ক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়তের বিধানও লক্ষ্যণীয়। এ প্রসঙ্গে ইসলামের কিছু ঘটনা উল্লেখ করি।

হযরত আবু বকর (রা) এবং হযরত ওমর (রা) হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর কন্যা হযরত ফাতেমা (রা) কে বিয়ের  প্রস্তাব দেন। কারণ, এটুকু যোগ্যতা ও সম্মান তাঁদের অর্জিত ছিলো। কিন্তু বয়সের বিবেচনায় হযরত ফাতেমা (রা), হযরত আবু বকর (রা) এবং হযরত ওমর (রা) এর চেয়ে অনেক ছোট ছিলেন। রাসুল (সা) বয়সের কথা বিবেচনা করে তাঁদের বিয়ের আবেদন নাকচ করে দেন। এ ঘটনা থেকে বোঝা যায়, মেয়ের বয়স কম হলে স্বামীর বয়সও খুব বেশি হওয়া উচিৎ নয়। বয়সের অসমতায় বিয়ে দেয়াও ঠিক নয়।

হযরত ফাতেমা (রা) এর বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র সাড়ে পনেরো বছর। অপরদিকে তার স্বামী হযরত আলী (রা) বয়স ছিলো একুশ বছর। এসব বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, বর-কনের বয়সের সমতা ঠিক রাখা উচিৎ। সবচেয়ে উত্তম হলো স্বামী তার স্ত্রীর থেকে বয়সে একটু বড় হবে।

স্বামী-স্ত্রী সমবয়সী হলে কি হয়?

গবেষণায় দেখা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য বেশি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের হারও বেড়ে যায়। সমবয়সী স্বামী-স্ত্রীর চেয়ে দম্পতির বয়সের পার্থক্য ৫ বছর হলে তাদের বিচ্ছেদের আশঙ্কা ১৮% বেশি হয়। স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর পার্থক্য ১০ বছর হলে তালাকের আশঙ্কা ৩৯% এবং ২০ বছর হলে ৯৫% বেড়ে যায়।

সমবয়সী মেয়েকে বিয়ে করলে ছেলেরা বৈবাহিক জীবনে সুখের সন্ধান পায়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই লক্ষণ দেখা যায়। তাদের থেকে বেশি বয়সের কারো সঙ্গে বিয়ে হলে প্রথম প্রথম সবকিছু ভালো লাগে। কিন্তু কিছু বছর যাওয়ার পর সম্পর্কে ভাঙন ধরতে শুরু করে।

সমবয়সীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করলে মনের মিল হওয়ার সম্ভাবনাটা অনের বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কম-বেশি ম্যাচিওরড হন। মানসিকতায় মিল থাকার কারণে বিপদে একে অপরের বড় সাপোর্টার হয়ে দাঁড়াতে পারেন, সম্পর্কের বাঁধনটাও মজবুত হয়।

স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর পার্থক্য কত হওয়া উচিত?

আপনি যদি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করেন তাহলে ছেলে-মেয়ে দুজনের উচ্চতা, বয়স, বেতন সব কিছুই একটা বিয়েতে বিশেষ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। চলুন আমরা জেনে নিই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ব্যবধান ঠিক কতটা থাকা উচিত-

বয়সের ব্যবধান

স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর আদর্শ ব্যবধান ধরা হয় ৩ বছরকে। আগেই বলেছি যে, মেয়েরা মনের দিক দিয়ে ছেলেদের তুলনায় একটু আগেই পরিপক্কতা লাভ করে। এজন্য মনে করা হয়, স্বামী যদি স্ত্রীর চেয়ে ৩ বছরের বড় হয় তবে দুজনের মানসিক পরিপক্কতা সমান হবে। তাছাড়া, স্বামী বয়সে বড় হলে পড়ালেখা আগে শেষ করে ক্যারিয়ারে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

উচ্চতার পার্থক্য

এরপর আসি স্বামী-স্ত্রীর উচ্চতার পার্থক্যে। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উচ্চতার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যবধান হচ্ছে ১২ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ স্বামীকে হতে হবে স্ত্রীর চেয়ে মোটামুটি ১২ সেন্টিমিটার বেশি লম্বা। এতে নাকি ভালোবাসা আর অন্তরঙ্গতা বাড়ে। আবার স্বামীর উচ্চতা বেশি হলে মেয়েরা নিজেকে বেশি নিরাপদ মনে করেন। আসলে ছেলেদের উচ্চতা সাধারণতভাবে মেয়েদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে স্বামী স্ত্রীরে উচ্চতার ব্যবধান অতিরিক্ত হলে দেখতে ভালো দেখায় না।

বেতনের অনুপাত

বিয়ের ক্ষেত্রে বর এবং কনের বেতন বা আয়ের ব্যাপারটা কিছুটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করেন, স্বামীর বেতন স্ত্রীর আয়ের চেয়ে দেড়গুণ হলে ভালো হয়। এখন তো অনেক পরিবারে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনই চাকরি করেন। তবে মুরুব্বীদের মতামত এমন যে, পরিবারে স্বামীকেই আর্থিক দায়িত্ব বহন করা উচিত। গুরুজনদের মতে, এতে পরিবারে সবসময় শান্তি বজায় থাকে এবং মেয়েরাও অনেকটা নিশ্চিন্তবোধ করেন।

দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখতে স্বামী-স্ত্রীর বয়স এর পার্থক্য কম হওয়াই উচিৎ! স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য কম হলে একে অপরের মন বুঝে চলার ক্ষমতা জন্মায় একে-অপরের সঙ্গে।

বিয়ে সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, সেবা, এবং পরামর্শ পেতে যোগাযোগ করুন তাসলিমা ম্যারেজ মিডিয়ার সাথে।
কল করুনঃ+880-1407-004393 অথবা +88-01782-006615 এ।
আমাদের মেইল করুন taslima55bd@gmail.com

16 COMMENTS

  1. I really like your blog.. very nice colors & theme. Did you design this website yourself or did you hire someone to do it for you? Plz respond as I’m looking to construct my own blog and would like to know where u got this from. kudos

  2. Hi there! This post couldn’t be written any better! Reading through this post reminds me of my previous room mate! He always kept talking about this. I will forward this article to him. Pretty sure he will have a good read. Thank you for sharing!

  3. You actually make it seem really easy along with your presentation but I to find this matter to be really one thing that I feel I would never understand. It seems too complicated and very extensive for me. I’m looking ahead to your subsequent submit, I will try to get the cling of it!

  4. Its fantastic as your other posts : D, thanks for putting up. “Too much sensibility creates unhappiness too much insensibility leads to crime.” by Charles Maurice de Talleyrand.

  5. What i don’t understood is in fact how you’re no longer really a lot more neatly-appreciated than you may be right now. You’re very intelligent. You realize therefore significantly when it comes to this matter, produced me individually imagine it from so many various angles. Its like women and men don’t seem to be fascinated unless it’s one thing to accomplish with Girl gaga! Your personal stuffs nice. At all times care for it up!

  6. Hi there! This post couldn’t be written any better! Reading through this post reminds me of my previous room mate! He always kept talking about this. I will forward this article to him. Pretty sure he will have a good read. Thank you for sharing!

  7. Does your site have a contact page? I’m having problems locating it but, I’d like to send you an email. I’ve got some ideas for your blog you might be interested in hearing. Either way, great site and I look forward to seeing it improve over time.

  8. Để cài đặt Fun88, bạn có thể truy cập trang web chính thức của nhà cái và tải xuống ứng dụng cho thiết bị di động của mình. Hoặc bạn có thể quét mã QR được cung cấp trên trang web để cài đặt nhanh chóng. Ứng dụng Fun88 cho phép bạn trải nghiệm cá cược mọi lúc, mọi nơi một cách tiện lợi và an toàn. cài đặt fun88

  9. Hello are using WordPress for your site platform? I’m new to the blog world but I’m trying to get started and set up my own. Do you need any html coding knowledge to make your own blog? Any help would be really appreciated!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here